সরস্বতী কে? সরস্বতী দেবীর জন্ম কিভাবে?

 প্রশ্নঃ সরস্বতী কে? তিনি কি আসলেই ব্রহ্মার কন্যা? ব্রহ্মা কি পরবর্তী কালে তার কন্যাকেই বিবাহ করে?

এই প্রশ্ন নিয়ে কটুক্তি ও করা হয় এইভাবে যে, " তোরা যে সরস্বতী কে পুজা করিস সে তো তার পিতাকেই বিবাহ করেছে" এবং রেফারেন্স হিসেবে পুরাণ কে উল্লেখ করে।

আজকে এর সঠিক উত্তর বেদের আলোকে ব্যাখ্যা দিচ্ছি, 

 প্রথমে এটা জানুন সরস্বতী শব্দের উৎপত্তি কিভাবে?

(সৃ গতৌ) এই ধাতু হইতে "সরস্" তদুত্তর "মতুপ" এবং "ঙীপ" প্রত্যয় যোগে " সরস্বতী " শব্দ সিদ্ধ হয়। 

"সরো বিবিধং জ্ঞানং বিদ্যতে য়স্যাং চিতৌ সা সরস্বতী "

অর্থাৎ, যাহার বিবিধ বিজ্ঞান অর্থাৎ শব্দ, সমন্ধ ও প্রয়োগের যথাযথ জ্ঞান রয়েছে সেই পরমেশ্বর এর নাম 'সরস্বতী '।

অর্থাৎ, জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর কে সরস্বতী নামে ডাকা হয়।

#তিনি_কারো_কন্যা_নন।

#এইবার_ব্যাখ্যায়_আসি_ব্রহ্মা_কে??

(বৃহ বৃহি বৃদ্ধৌ) এই সকল ধাতু হতে 'ব্রহ্মা' শব্দ সিদ্ধ হয়। "য়োৎ খিলং জগন্নির্মাণেন বর্হতি ( বৃংহতি) বদ্ধর্য়তি স ব্রহ্মা "।

অর্থাৎ, যিনি সমস্ত জগৎ রচনা করিয়া বিস্তৃত করেন সেই পরমেশ্বর এর নাম 'ব্রহ্মা'। 


আবার তৈত্তিরীয় উপনিষদে বলা হয়েছে, 'সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম'।

তাহলে কি বুঝলেন? ব্রহ্মা বলুন বা সরস্বতী দুটোই পরমেশ্বর এর গুনবাচক নাম মাত্র।

এক পরমেশ্বর এর দুই নাম, তাহলে তারা কেউ কন্যা বা কেউ পিতা হয় কিভাবে?

এবার দেখুন বেদের মন্ত্রে অনেক জায়গায় সরস্বতী শব্দের উল্লেখ রয়েছে। 

মন্ত্র গুলো দ্বারা জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর সরস্বতী কে স্তুতি করা হয়েছে। মন্ত্র গুলোর ব্যাখ্যা নিচে দিলাম-

 #মহা অর্ণঃ সরস্বতী প্র চেতয়তি কেতুনা। 

ধিয়ো বিশ্বা বি রাজতি।।

     ( ঋগ্বেদ ১/৩/১২)

অর্থাৎ, জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর প্রজাশক্তি দ্বারা মহান জ্ঞানসমুদ্রকে প্রকাশ করে এবং ধারনাবতী বুদ্ধি সমুহ কে দীপ্তি দান করে।

#চোদয়িত্রী সুনৃতানাং চেতন্তী সুমতীনাম্।

     যজ্ঞং দধে সরস্বতী।।

         (ঋগ্বেদ ১/৯১/৮)

অর্থাৎ, সত্য ও প্রিয়বানীর প্রেরণাদাত্রী এবং সৎবুদ্ধির চেতনাদাত্রী বিদ্যা শুভ কর্মকে ধারন করিয়া আছে।

#শংনো দেবা বিশ্বদেবা ভবন্তু শং সরস্বতী, সহ ধীতি রস্তু।

শমভিষাচঃ শমু রাতিষাচঃ শংনো দিব্যাঃ পার্থিবাঃ শন্নো অপ্যাঃ।।

          (ঋগ্বেদ ৭/৩৫/১১) 


অর্থাৎ, জ্ঞানজ্যোতির রক্ষক বিদ্যানেরা আমাদের কল্যাণ বিধান করুন। জ্ঞান প্রদানকারী পরমেশ্বর নানা প্রকার বুদ্ধির সাথে কল্যান দায়িনী হোক, বাহুবলে বলীয়াম এবং অন্যের আশ্রয়ে বলীয়ান দিব্য, পার্থিব এবং জলচর প্রানী দ্বারা আমাদের কল্যাণ করুক।

তখনকার দিনে ঋষিরা তথা সাধারন মানুষ মুর্তি দিয়ে নয় বরং পরমেশ্বর কে 'সরস্বতী' নামে ধ্যান ও উপাসনা করত, জ্ঞান ও বিদ্যা লাভের জন্যে।

কালের বিবর্তনে সেটা মায়ের রুপ দিয়ে বর্তমানে বিদ্যার দেবী বলে পুঁজো করা হচ্ছে।

এমনকি তথাকথিত পুরান গুলোতে সরস্বতী শব্দের অনেক অপব্যাখা, সৃষ্টি নিয়ে অনেক কাহিনী ও লিখা হয়েছে। যেগুলো নিয়ে আমাদের বরাবর বিভিন্ন কটুক্তি ও শুনার লাগে।

মনে রাখবেন, পুরান গুলো সনাতন ধর্মের মুল গ্রন্থ ও নয় এবং এইগুলো তৈরিকৃত কিছু কাহিনী নির্ভর মাত্র।

যেগুলো অনেক পরে লিখা হয়েছে।

কিন্তু প্রধান ও আদি ধর্মগ্রন্থ বেদের ব্যাখা আমি বা আপ্নি চাইলেও মিথ্যা হয়ে যাবে না।

তাই যেটা জানবেন, বেদের আলোকে সঠিক ব্যাখ্যা জানবেন।

হরে কৃষ্ণ 🙏🏼



Comments

Popular posts from this blog

ভগবান স্বয়ং ভারতের কাছ আসে?

শ্রীকৃষ্ণ কি প্রতিজ্ঞা করছে?